স্বপ্ন দেখি, নিরাপদ পোল্ট্রি নিশ্চিত করার

আমরা শুধুমাত্র একটি খামার বা ব্যবসা গড়তে আসিনি — আমরা এসেছি একটি স্বপ্ন নিয়ে। এই স্বপ্ন শুধু আমাদের কয়েকজনের জন্য নয়, বরং পুরো দেশের জন্য। আমরা বিশ্বাস করি, হয়তো প্রতিটি ঘরে দেশি বা অর্গানিক মুরগি পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু গুড পোল্ট্রি প্র্যাকটিস অনুসরণ করে নিরাপদ পোল্ট্রি সবার জন্য নিশ্চিত করা সম্ভব।

লাইভস্টক সেক্টরে ইতোমধ্যে অনেক স্টেকহোল্ডার বিভিন্নভাবে কাজ করছেন — আমরা সেই উদ্যোগগুলোকে আরও সংগঠিত, কার্যকর এবং টেকসই করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছি। কারণ, আমরা মনে করি নিরাপদ পোল্ট্রি শুধু ব্যবসা নয় — এটি দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও খাদ্যনিরাপত্তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

আমাদের অফিসিয়াল যাত্রা

ফ্রেশ ফার্মার্সের অফিসিয়াল যাত্রা মাত্র এক বছর আগে শুরু হলেও, এই স্বপ্ন ও পরিকল্পনার বীজ আমরা অনেক আগেই বপন করেছিলাম। লাইভস্টক নিয়ে আমাদের একাডেমিক জ্ঞান ও চাকরিজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বারবার ভেবেছি—কীভাবে একটি আদর্শ গুড পোল্ট্রি প্র্যাকটিস ভিত্তিক সিস্টেম এবং একটি স্বতন্ত্র বিপণন কাঠামো গড়ে তোলা যায়, যেখানে খামারি ও ভোক্তা উভয়েই লাভবান হতে পারে।

এই ভাবনার প্রথম বাস্তব রূপ ছিল আমাদের নিজস্ব ফার্ম। এরপর ধীরে ধীরে আমরা আরও খামারিদের এই যাত্রায় যুক্ত করেছি, যেন একটি সুশৃঙ্খল, স্বাস্থ্যকর এবং টেকসই পোল্ট্রি চেইন গড়ে তোলা যায় — যা শুধু মানসম্পন্ন নয়, বরং মানুষের আস্থা অর্জনেও সক্ষম।

ব্রয়লার নয়, সমস্যা ব্যবস্থাপনায়

অনেক সময় আমরা ব্রয়লার মুরগি নিয়ে বাড়াবাড়ি ধরনের ভীতির সৃষ্টি করি। অথচ ব্রয়লার নিজে কোনো জেনেটিকালি মডিফায়েড বা ক্ষতিকর প্রাণী নয়। মূল সমস্যা তৈরি হয় অব্যবস্থাপনা, অতিরিক্ত ও ভুলভাবে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার, এবং গুড পোল্ট্রি প্র্যাকটিসের অভাবে।

আমরা এই জায়গাতেই সচেতনভাবে কাজ করছি। আমাদের ফার্মে প্রয়োজন না হলে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করি না। প্রয়োজনে যদি ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে আমরা নিশ্চিত করি সঠিক ডোজ, এবং উপযুক্ত উইথড্রয়াল পিরিয়ড। এর ফলে মাংসে কোনো ক্ষতিকর অবশিষ্টাংশ থাকে না এবং এটি নিরাপদভাবে খাওয়া যায়।

আমাদের লক্ষ্য — ব্রয়লার সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দূর করে সচেতন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করা।

প্রাকৃতিক উপাদানেই ইমিউন বুস্ট

আমরা আমাদের ফার্মে মূলত প্রাকৃতিক উপাদাননির্ভর সমাধানের ওপর জোর দিই। ন্যাচারাল প্রোবায়োটিকস, প্রিবায়োটিকস, এসেনশিয়াল অয়েল ও অর্গানিক অ্যাসিড ব্যবহার করে মুরগির স্বাভাবিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউন সিস্টেম) বাড়ানোর চেষ্টা করি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে যতটা সম্ভব সিন্থেটিক ওষুধের ব্যবহার কমিয়ে এনে একটি স্বাস্থ্যসম্মত এবং নিরাপদ উৎপাদন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা।

বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনায় টেকসই খামার

পোল্ট্রি ম্যানেজমেন্টে শেড স্ট্রাকচার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের প্রতিটি শেড বৈজ্ঞানিকভাবে পরিকল্পিত ও নির্মিত, যাতে সুষ্ঠু বায়ু চলাচল, আলো, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণসহ স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত হয়। আমাদের সঙ্গে যারা যুক্ত হচ্ছেন, তাদেরও আমরা একই রকম পরিকল্পিত শেড গড়ে তুলতে উৎসাহিত করি।

এছাড়া, টেকসই খামার গড়ার লক্ষ্যে আমরা গ্রিন এনার্জি ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের ফার্মে সোলার সিস্টেম ব্যবহার করে বিদ্যুৎ খরচের প্রায় ৬০% সাশ্রয় করছি। ভবিষ্যতে বায়োগ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমে ব্রুডিং সিস্টেম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে, যা আমাদের খরচ আরও কমাবে এবং পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনাকে এগিয়ে নেবে।

নিরাপদ খাবার, সবার জন্য — সহজলভ্য দামে

আমরা শুধু ভালো ও নিরাপদ পোল্ট্রি প্রোডাকশনেই সীমাবদ্ধ নই — বরং আমাদের লক্ষ্য হলো তা সাধারণ ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রেখে পৌঁছে দেওয়া। আমাদের বিশ্বাস, নিরাপদ খাবার সবার অধিকার। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

এই ধারাবাহিকতায় খুব শীঘ্রই আমরা বগুড়া শহরে আমাদের প্রথম আউটলেট চালু করতে যাচ্ছি। এরপর আমরা ঢাকা শহরেও আউটলেট নিয়ে কাজ শুরু করবো। বর্তমানে আমরা ঢাকায় প্রসেস করা মুরগির হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু রেখেছি, যাতে সরাসরি ভোক্তা আমাদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর প্রোডাক্ট ঘরে বসেই পেতে পারেন।

বেঙ্গল মিটসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়মিত আমাদের কাছ থেকে মুরগি সংগ্রহ করছে — যা আমাদের প্রোডাক্টের প্রতি তাদের আস্থা ও আমাদের মানের নিশ্চয়তার প্রতিফলন।